ধনী ও সফল হওয়া খুব একটা কঠিন বিষয় নয়, যদি আপনি প্রতিষ্ঠিত ধনী ও সফল ব্যক্তিদের জীবনী থেকে নেওয়া কিছু মৌলিক শিক্ষা রপ্ত করে নিজের জীবনে স্থায়ী কিছু অভ্যাসে রূপান্তর করতে পারেন। সে জন্য আপনাকে হয়তো অনেক অধ্যবসায় করতে হতে পারে, অনেক ধৈর্য্য ধরে নিজের জীবনের পরিবর্তনের জন্য নিয়মিত কাজ করে যেতে হতে পারে।
হার্ভ ইকার তার জীবনের বিগত ৩০ বছরেরও বেশী সময়ের অভিজ্ঞতা ও নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের চেয়েও বেশী রেভিনিউ অর্জন করতে যে মৌলিক দশটি শিক্ষা পেয়েছেন তা এভাবেই বর্ণনা করছেনঃ
১। নিজের জীবনের চালকের আসনে নিজেকেই বসানঃ
আমরা অনেকেই মনে করি জীবন চলার পথে এক সময় সফলতা আমাদের হাতে এসে ধরা দেবেই! কথাটা মোটেও সত্য নয়। আমাদেরকে আমাদের জীবনের গতিপথ ঠিক করতে হবে, কেবল তবেই চোখ-কান-নাক বন্ধ করে কষ্ট করে যেতে পারবো। মনে রাখতে হবে এই যে কষ্ট করাটা যেনো সঠিক পথেই হয়, নতুবা উলটো পথে হাজার মাইল পাড়ি দিলেও সঠিক গন্তব্যে পৌছানো সম্ভব নয়। তার চেয়ে বড় কথা, নিজের জীবনের চালিকা শক্তি নিজের হাতেই রাখতে হবে, কেবল ‘নিয়তি’কে দোষারোপ করলে নিজের ব্যর্থতা নিজেই ডেকে আনবো। নিজের প্রতি বিশ্বাস থাকতে হবে, এর পর গন্তব্য ঠিক করতে হবে, এর পরেই কষ্ট করে যাওয়া যাবে।
২। ফল যদি পেতে চান, মূল টা কে পরিচর্যা করুনঃ
যে কোনো একটা গাছের ক্ষেত্রেই দেখুন, আপনি যদি ভালো ও উন্নতমানের ফল পেতে চান, তবে আপনাকে মূল থেকেই পরিচর্যার ব্যবস্থা করে যেতে হবে। মূলে যদি আপনি অবহেলা করেন, আপনি সেই গাছ থেকে ভালো কিছু আশা করতে পারেন না।
আজকে যে সব ফল পেয়েছেন, তা হয়তো আপনি বদলাতে পারবেন না, কিন্তু মূলে ফিরে গিয়ে পরিচর্যা করলে আপনি আগামিতে আরো ভালো ফল পাবেন। নিজের ভুল গুলোকে সংশোধন করে সামনে এগুন।
৩। অস্বচ্ছন্দবোধ করতে শিখুনঃ
আমরা কেউই আমাদের ‘কোমফোর্ট জোন’ থেকে বের হতে চাই না। আরাম ছেড়ে কষ্ট করতে পারাটা অনেক কঠিন। যখনই কোনো বাধা বা বিপত্তির মুখোমুখি হই, আমরা থমকে দাঁড়াই, সামনে এগুতে চাই না। আমরা মনে করি, আমরা হয়তো কনো ভুল করে ফেলেছি, তাই এই প্রাচীরসম বাধা। এই অবস্থায় আমাদের ভিন্ন পথে চেষ্টা করে দেখা উচিৎ।
আপনি যদি অস্বচ্ছন্দবোধ (uncomfortable) করতে শুরু করেন, চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হোন, অথবা নিরুৎসাহিত হতে থাকেন, মনে করবেন আপনি তখনই সঠিক পথে অবস্থান করছেন।
সফলতা কখনোই সরল পথে অর্জিত হয় না। সফলতার বাস্তব অবস্থান হলো প্রচুর বাধা-বিপত্তি ও অপ্রত্যাশিত ঘুর্ণিপথের বাঁকে বাঁকে।
৪। আপনার ফোকাসকে বাড়তে দিবেন না, সংকীর্ণ করুনঃ
আমাদের প্রত্যেকের জীবন একরাশ সমস্যার সমাহার। আমরা যদি কেবল সমস্যা গুলোর দিকেই মনোনিবেশ করি, তাহলে আমাদের সফলতার লক্ষ্য থেকে আমরা সহজেই বিচ্যুত হবো। তাই, আমাদের ফোকাস (লক্ষ্য) স্থির করতে হবে আমাদের অর্জনেচ্ছু লক্ষ্যবিন্দুর প্রতি। নিজের জীবনের কি কি ব্যর্থতা আছে তার দিকে দৃষ্টিপাত না করে, নিজের জীবনের এই মুহুর্তে কি কি অর্জনীয় আছে, তার দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ। তাতে আমাদের ফোকাস লিষ্টে ব্যর্থতাগুলো যোগ করে অযথা লিষ্ট টা বড় করে নিজের কাঁধে বোঝা চাপানো থেকে মুক্তি পাবো।
৫। কথা রাখার অভ্যাসটাকে পাকাপোক্ত করতে শিখুনঃ
আমরা যাই বলি, তাই যেনো করতে বদ্ধপরিকর থাকি। কোনো প্রজেক্ট শুরু করলে তা যেনো শেষ করি, যেভাবেই হোক না কেনো। এতে আমাদের নিজেদের মধ্যে সততা (integrity) এর প্রকাশ ঘটবে, শৃংখলা (discipline) আমাদের অভ্যাসে পরিনত হবে। এ পর্যন্ত কোনো সফল ব্যক্তিই তার সফলতায় শৃংখলা ছাড়া পৌছাতে পারেনি।
৬। অর্থ-ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা অর্জন করতে শিখুনঃ
আপনি ধনী হোন আর গরীব হোন, চাকুরী করুন আর ব্যবসা করুন, আপনার আয়- ব্যয় এর হিসাবে আপনাকে পাকাপোক্ত হতে শিখতে হবে। যদি মনে করেন আমি আগে ধনী হয়ে নিই, তখনই হিসাব নিকাশ ঠিক করতে একটা সিস্টেম তৈরী করবো। তার মানে আপনি এই মুহুর্তে ব্যর্থতাকেই বেছে নিচ্ছেন। এখন থেকে অভ্যাসটা গড়ে তুলুন, যখন ধনী হবেন, তখন এই অভ্যাস গড়ে তোলার সময় পাবেন না। আর যদি ধনী নাও হোন, তবুও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে পড়ে কষ্ট পাবেন না।
৭। ধনী ও সফলদের জীবন থেকে শিখুনঃ
ধনী ও সফলদেরকে আমরা জীবনে সামনা সামনি না দেখলেও তাদের জীবনী পড়ে, ভিডিও দেখে, তাদের জীবনের উত্থান পতন থেকে আমরা নিজেদের জন্যে অনেক শিক্ষা নিতে পারি। তাদের কারো জীবনই সরলরেখার মতো তাদেরকে সফলতায় পৌছে দেয়নি। তারাও অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে তাদের অবস্থান গড়ে নিয়েছেন। তাদের জীবন-মডেল হতেও অনেক কিছুই শিখা সম্ভব।
৮। আপনার আয়ে সীমা টেনে দিবেন নাঃ
যারা চাকুরী করেন, তাদের আয়ে একটা সীমা টানা থাকে। তারা তাদের মেধা, শ্রম, শক্তি সব কিছুই দিয়ে যাচ্ছেন অপরের জন্যে, যার বিনিময়ে তারা পাচ্ছেন একটা সীমিত আয় মাত্র! আপনার আয়ের সীমা বাড়াতে গেলে, আপনাকে প্রথমেই ব্যবসা করার মানসিকতা তৈরী করতে হবে, চাকুরীর “কোমফোর্ট জোন” থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কিন্তু ব্যবসা করতে গিয়ে অনেকেই যে ভুলটা করেন, তা হলো, তারা নিজেরাই নিজেদের ‘ব্যবসা’ হয়ে যান। তার মানে হলো, তারা যতক্ষন ব্যবসায় সময় দিতে পারেন, যতক্ষন তদারকি করতে পারেন, ততক্ষনই তাদের ব্যবসাটা তাদেরকে আয় দিয়ে থাকে – যাকে অন্য ভাষায় বলে একটিভ ইনকাম। এরকম ব্যবসাটাকে আত্মকেন্দ্রিক করে রাখলে ব্যবসার উন্নতি হবে খুবই ধীরে, অথবা থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।
আপনি নিজে না থাকলেও ব্যবসাটা সচল থাকার একটা ব্যবস্থা করে দেন। একটা সিস্টেম তৈরী করুন, যেখানে আপনার ভুমিকা ছাড়াও আপনার ব্যবসা গতিশীল থাকবে। এতেই আপনার আয়ের দরজা খুলা থাকবে, সীমাহীন আয়ের দ্বার উন্মোচিত করতে পারবেন।
৯। অর্থের উপর নয়, সমস্যার উপর দৃষ্টি দিনঃ
অনেকেই যারা নতুন ব্যবসা শুরু করেন, তারা নিজেকে নিয়েই চিন্তিত থাকেন; যেমন আমাকে কেউ বিশ্বাস করবে তো? আমি কি পারবো? ইনকাম টা নিয়মিত আসবে তো? ইত্যাদি আরো অনেক। এভবে নিজেকে নিয়ে চিন্তা করা বাদ দিয়ে চিন্তা করুন অন্যকে নিয়ে। কিভাবে তাদের সমস্যা সমাধানে আপনি ভুমিকা রাখতে পারেন, কিভাবে অন্যকে সাহায্য করতে আপনি নিজেকে সমর্পন করতে পারেন, কিভাবে আরেকজন আপনার কাছ থেকে উপকৃত হবে?
মনে রাখবেন, যেখানের মানুষের সমস্যার সমাধান হবে, সেখানেই তারা অর্থ ব্যয় করতে প্রস্তুত। মানুষের problem solver হোন।
“যেখানেই সমস্যা, সেখানেই ব্যবসা!”
১০। অনবর্ত শিখতে থাকুনঃ
প্রতিনিয়তই আমাদের চারপাশে নতুন নতুন জানা অজানা তথ্যের আবির্ভাব হচ্ছে। আমরা যদি সেই সব তথ্য, জ্ঞান, স্কিলস, যোগ্যতা অর্জন করতে না পারি, আমরা অবশ্যই অন্যদের থেকে পিছে পড়ে থাকছি। এক সময় যেটা আবিষ্কার ছিল, এখন সেটা ইতিহাস। তাই নিয়মিত জ্ঞানার্জন করে যেতে হবে, আমাদের নিজেদেরকে তথ্যে সমৃদ্ধ করে যেতে হবে। সে জন্য যেমন অর্থ বাজেট করা দরকার, তেমনই নিজের ব্যস্ততার ফাঁকে কিছু সময়ও ব্যয় করা দরকার।
ব্যক্তিগত জীবনেও সবচেয়ে উত্তম বিনিয়োগ হলো নিজের, ও নিজের সন্তানদের জ্ঞানার্জনের জন্যে বিনিয়োগ করা। যারাই সফল হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের জীবন থেকে দেখতে পাই তারা দৈনিক একটা সময় স্থির করে রাখেন লেখাপড়ার পেছনে।